আশিকুর রহমান, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি:
বিজ্ঞানের মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো রসায়ন৷ বিশ্বজগত সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষ এবং তার পারিপার্শ্বিক সকল কিছুর কারণ এবং ব্যাখ্যার সাথে রসায়ন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। রসায়নের জটিল ও গুরুগম্ভীর বিষয়গুলোকে সহজবোধ্য ভাবে সকল শ্রেনীর মানুষের নিকট তুলে ধরার উদ্দেশ্যে কেমফিউশন নামক সংগঠনের যাত্রা শুরু৷ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন ও রসায়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে তৈরি কেমফিউশন পরিবার কাজ করে যাচ্ছে রসায়নের শিক্ষার্থী ও অগ্রজদের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরিতে, ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাসমূহের আলোচনার মাধ্যমে রসায়নের গবেষণায় সকলকে আগ্রহী করতে৷
কেমিফিউশন এর বর্তমান কার্যক্রম ও সংগঠনের সার্বিক বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রতিদিন এর সাথে কথা বলেন উক্ত প্লাটফর্মের একজন নিরলস কর্মী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র আন নাফি তামিম। তিনি বলেন, 'বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, অলিম্পিয়াড ও আরো নানাবিধ কারণে বাংলাদেশে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে এবং সেই সাথে এই বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন ক্লাব,সংগঠন গড়ে উঠেছে।দুঃখজনকভাবে রসায়ন নিয়ে এ ধরণের কার্যক্রম কেউ প্রচলন করেনি যা এই বিষয়ের জনপ্রিয়তা অর্জন এবং বিশাল গবেষণাক্ষেত্র ও সম্ভাবনাকে সকলের সামনে তুলে ধরার মত।এইদিক লক্ষ্য রেখেই রসায়ন, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল এর উদ্যমী একদল শিক্ষার্থীর হাত ধরে ২৯ এপ্রিল,২০২০ এ পথচলা শুরু করে 'কেমফিউশন ' ।
বর্তমানে এই সংগঠনের বিভিন্ন টিমে ১০০ এর অধিক তরুণ কাজ করে যাচ্ছে। রসায়নপ্রেমীদের এক ছাতার তলে নিয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে আমাদের এই সজীব প্রাণোচ্ছল তরুণেরা।
অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বিজ্ঞান,রসায়ন,রাসায়নিক প্রকৌশল এর বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে সংগঠনটি। ক্ষুদ্র পথচলায় এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে দেশের প্রথম রসায়নভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট।এছাড়া কেমিফিউশন এর রয়েছে সমৃদ্ধ ব্লগ যেখানে রসায়ন ও নানা সৃজনশীল বিষয়ে প্রতিনিয়ত লেখালেখি করে শিক্ষার্থীরা। ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার এও রয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাবলীল বিচরণ।
'কেমফিউশন ' এর আরেকটি অর্জন হলো ম্যাগাজিন প্রকাশ। সেপ্টেম্বর এ প্রকাশিত হয়েছে এই প্রথম ম্যাগাজিন 'হাইড্রোজেন' যা ইতোমধ্যে ৫৫০০+ কপি ডাউনলোড হয়েছে।এটি শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের একটি অন্যতম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও ক্যারিয়ার নিয়ে সর্বদাই সচেষ্ট এ সংগঠন। Journey of a chemist নামক ওয়েবিনার এ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল এর সফল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে যথাযথ দিক নির্দেশনা প্রদান ও আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।আশা করা যাচ্ছে এটি দেশে মৌলিক গবেষণায় আগ্রহী প্রজন্ম গড়ে তুলতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
এছাড়া প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীরা নানা ধরণের একাডেমিক সমস্যার মুখে পড়ে। এনিয়ে কেমফিউশন একটি জরিপ ও পরিচালনা করে । তাদের জন্য যথাযথ গাইডলাইন প্রদানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের প্রিয় এই সংগঠনের সদস্যরা। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা আয়োজন এর মাধ্যমে বিজ্ঞানমনা ও সৃজনশীল প্রতিভা অন্বেষণ করছে সংগঠনটি। প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক সমস্যা সমাধানে লাইভ আলোচনা ও গ্রুমিংয়ের সূচনাও করা হচ্ছে।
দেশে বিজ্ঞান বিশেষত রসায়নকে জনপ্রিয়করণই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। সেই সাথে গবেষণায় সকলকে উদ্বুদ্ধ করা এর অন্যতম লক্ষ্য।পাশাপাশি রসায়ন, ফলিত রসায়ন, রাসায়নিক প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা যেন কোনভাবেই হতাশায় না ভোগে সেজন্য আমরা এই বিষয়ভিত্তিক সম্ভাবনার পরিধিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।কেমফিউশন এর অনেক সদস্য বর্তমানে গবেষণায় যুক্ত আছেন।অনেকের বিভিন্ন প্রকাশনা আন্তর্জাতিক জার্নালে জায়গা করে নিচ্ছে।
একটি দেশ এগিয়ে যায় বিজ্ঞানমনস্ক ও গবেষণায় আগ্রহী প্রজন্মের হাত ধরে।বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ, এনার্জি সংকট ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত। নবায়নযোগ্য শক্তি,গ্রিন কেমিস্ট্রি, গ্রিন হাউজ ইফেক্ট এর সমাধান ইত্যাদি নানা বিষয়ে রসায়ন ও এ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বর্তমান প্রগতিশীল পৃথিবীতে জ্ঞানচর্চা ও গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।এজন্য আমাদের দেশে বিজ্ঞানচিন্তার জোয়ার প্রয়োজন। রসায়ন এর প্রসার এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে।এটিই 'কেমফিউশন' এর লক্ষ্য।কেমফিউশন কোনো ব্যক্তি বা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক নয়।কেমফিউশন একটি সম্ভাবনার গল্প,এগিয়ে যাওয়ার গল্প।কেমফিউশন গুটিকয়েক মানুষ নয়,এটি বিজ্ঞানভিত্তিক,গবেষণামুখী, উন্নত এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন।সর্বশেষ এটাই বলার,আমরা মনে করি, প্রকৃত বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানের উন্নয়ন সম্ভব।আর কেমিফিউশন পরিবার সে লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে। '
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন